মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক::
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ফেনীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার করা হবে। অপরাধী সবাইকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। শুক্রবার বিকালে গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেয়েটিকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠাতে চেয়েছিলাম। তবে তার শারীরিক অবস্থা সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার মতো ছিল না। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এখানে চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মেয়েটিকে বাঁচানো গেল না। বোরকা পরে হাত-মুখ ঢেকে এসে দুর্বৃত্তরা গায়ে আগুন দিয়েছে। ওদের কাউকে ছাড়া হবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ওদের পেতেই হবে।’
আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার সংস্কৃতি পাকিস্তান ও বিএনপি জামায়াতের মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন পণ্ড করার জন্য তারা জ্বালাও-পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। কিন্তু নর্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আবার ২০১৫ সালে সরকার উৎখাত করার নামে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। এই দেশে এমন বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যখন দেশের মানুষের ওপর হামলা শুরু করে তখন তারা বস্তিতে আগুন দিত। আগুন দেয়ার পর যখনই বস্তিবাসী ঘর থেকে বেরিয়ে আসত তখন তাদের গুলি করে হত্যা করা হতো। এভাবে তারা বহু মানুষ হত্যা করেছে। বিএনপিও একই কায়দায় মানুষ হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ২০ দলীয় জোট করেছে। সেই জোটে আছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত। বিএনপি-জামায়াত গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। এছাড়াও বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এই যে যেখানে-সেখানে পুড়িয়ে মানুষ মারা হচ্ছে- এই পথটা তো বিএনপিই দেখিয়ে গেছে। আমি মনে করি এগুলো প্রতিহত করতে সামাজিক সচেতনতা দরকার।’
ভবনে আগুন লাগলে করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ভবন ব্যবহার করেন তাদের জানা থাকা দরকার আগুন লাগলে কীভাবে ভবন থেকে বের হতে হবে। ভবনের মালিকদের ভবন থেকে বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে। আমাদের দেশে একটা প্রচলন আছে যে, কোনো কিছু হলেই তা সরকার সমাধান করে দেবে। সরকার তো সরকারের কাজ করবেই; কিন্তু সবার স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করা উচিত। যারা আর্কিটেক্ট, যারা অনুমোদন দেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যেন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। আমাদের সবকিছু প্ল্যান করে ডিজাইন করা উচিত। এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়ব না, এ মানসিকতা থাকা উচিত না। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কারণে ফায়ার এক্সিট নেই এটা কেমন কথা। যারা ভবন ব্যবহার করেন তারা তো শিক্ষিত মানুষ। তাদের মধ্যে তো সচেতনতাবোধ থাকা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বনানীর যে ভবনে আগুন লাগল সেই ভবনটিতে দেখা গেছে ফায়ার সার্ভিসের বাহিনী যে কাজ করবে, তারা যে একটা জায়গায় দাঁড়াবে সেই বেলকনি পর্যন্ত নেই।
এরকম অপরিকল্পিত ভবনে আগুন নেভানোর কাজে গিয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহেল নিহত হল। আমি চেষ্টা করেছিলাম, ওকে চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও তাকে বাঁচানো গেল না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী। দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়াকে কেউ প্রতিহত করতে পারবে না। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, কিন্তু বর্তমান সরকার তা মোকাবেলা করে দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করেছে। আমাদের দেশের নানা সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল যারা এসব সমস্যার শিকার তাদের বেশিরভাগই নিুবর্গের মানুষ।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক-লেখালেখির বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর কোনো ধরনের নাটক নির্মাণ, লেখালেখি বা ক্রীড়ানুষ্ঠান-টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যার যার অবস্থান থেকে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতে উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ এ সময় তিনি দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন দলের উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমাম, হামিদা বানু ও মকবুল হোসেন। তারা বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেক ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। নতুন প্রজšে§র কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হবে। ’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রফেসর আবদুল খালেদ, প্রফেসর হামিদা বানু, মুকুল বোস, সাবেক রাষ্ট্রদূত জমির, মশিউর রহমান, মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রমুখ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
Leave a Reply